লকডাউন ভঙ্গ করলে ঈদ পর্যন্ত রাস্তাতেই থাকতে হবে: ডিএমপি কমিশনার
প্রকাশ: ২০২০-০৫-২১ ১০:২৬:০২ || আপডেট: ২০২০-০৫-২১ ১০:২৬:০২

ঈদকে সামনে রেখে লকডাউন ভঙ্গ করে কেউ পায়ে হেঁটেও গ্রামের বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে ঈদ পর্যন্ত রাস্তাতেই রাখা হবে এবং কোথাও যেতে দেয়া হবে না বলে হুশিয়ার করেছেন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, বেঁচে থাকলে আগামী ঈদ আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে করবো। পুলিশ আপনাদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে, আরও আসবে।রোজার আগে আমরা ৭ হাজার মানুষের জন্য দৈনিক খাবারের ব্যবস্থা করতাম। রমজানের পর
এটি আরও বৃদ্ধি করা যায় কিনা আমরা চেষ্টা করছি। বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ঈদসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, আপনাদের জন্য কাজ করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা আক্রান্ত হচ্ছেন, মারাও গেছেন। আপনাদের জন্যই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। আপনারা সহযোগিতা করলেই করোনামুক্ত বাংলাদেশ সম্ভব হবে। মাওয়া ঘাটে হাজার হাজার মানুষ বাড়ি ফেরার জন্য ভিড় করেছিল, আমরা ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি। যারা যেখানে ছিল, সেখানেই আমরা অবস্থান করতে বলেছি। এখন থেকে যদি কাউকে গ্রামের বাড়ির দিকে যেতে দেখা যাবে, তাকে সেখানেই বসিয়ে রাখা হবে, সেখানেই আপনাদের ঈদ হতে পারে। আপনারা যে যেখানে আছেন সেখানেই
থাকবেন, তা না হলে আমরা যেমন কঠোর আছি- তেমন কঠোর থাকবো। এসময় সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এক হাজার দু:স্থ পরিবারের হাতে ওই ঈদ সামগ্রী তুলে দেন অতিথিরা।সুপার সাইক্লোন আম্পানের তাণ্ডবে ভারতের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যেই বুধবার রাত ৯টায় সরকারি বাসভবন নবান্নে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান। খবর
আনন্দবাজার। মমতা বলেন, দুই ২৪ পরগনা ধ্বংস হয়ে গেছে…বাড়িঘর, নদী বাঁধ ভেঙে গেছে, ক্ষেত ভেসে গেছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আম্পানের তাণ্ডবে এখন পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। সারাদিনই নবান্নের কন্ট্রোল রুম থেকে ঝড়ের গতিপ্রকৃতি খোঁজখবর রাখছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, বাসন্তী, কুলতলি, বারুইপুর, সোনারপুর, ভাঙড় থেকে যা খবর এসেছে তা ভয়াবহ। খারাপ খবর উত্তর ২৪ পরগনা
থেকেও। তবে ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে, সেই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পেতে ৩-৪দিন লেগে যাবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, এলাকার পর এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের সাহায্যে ৫ লাখ মানুষকে সরাতে পেরেছি। নন্দীগ্রাম ও রামনগরসহ একাধিক এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, নন্দীগ্রাম, রামনগর প্রভৃতি এলাকায় বড় ক্ষতি। দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা প্রায় ধ্বংস ঝড়ের দাপটে। গাছ পড়ে মানুষ মারা গেছেন। মোট ক্ষতি এখনও গণনা করা যায়নি। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই। পাথরপ্রতিমা, নামখানা, কাকদ্বীপ, কুলতলি,
বারুইপুর, সোনারপুর সব জায়গায় ধ্বংসের ছবি। রাজারহাট, হাসনাবাদ, সন্দেশখালি, গোসাবা, হাবড়া সব জায়গাই বিপর্যস্ত।ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রবল গতিমুখ বর্তমানে পুরোপুরি পশ্চিমবঙ্গের দীঘা ও সাগরদ্বীপ বরাবর। এই দুই অঞ্চলের ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে। আর বাংলাদেশ উপকূল থেকে রয়েছে ২৫০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিমে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের অনেক গতি ঘর-বাড়ি উপরে ফেলেছে। গাছপালারসহ বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। আর দীঘা ও সাগরদ্বীপ থেকে রয়েছে দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে। এক্ষেত্রে যে কোনো সময় ঝড়টির মুখ উঠে আসবে
পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে।এমন পরিস্থিতিতে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে তৎপর রেলও। দুর্ঘটনা রুখতে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের কামরাগুলির চাকা শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনাটি দেখা গেছে ভারতের বিভিন্ন রেল স্টেশনে। দেশটিতে লকডাউনের জেরে গত ২৫ মার্চ থেকেই পুরোপুরি স্তব্ধ ভারতের স্বাভাবিক রেল পরিষেবা। কিন্তু বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে রয়েছে একাধিক ট্রেন। এর মধ্যেই বিপুল গতি নিয়ে ওড়িশা ও এ রাজ্যের উপকূলবর্তী সীমানায় হাজির ঘূর্ণিঝড় আম্পান। সেই ঝড়ে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও রয়েছে। স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনগুলি যাতে কোনো বিপদ না ঘটায় সে জন্য আগেভাগেই
সতর্ক রেল। সে কারণেই দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনগুলির চাকা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব রেলের হাওড়া, শিয়ালদহ ডিভিশনের বহু স্টেশনেই দেখা গিয়েছে এমন ছবি। কেনো ট্রেনের চাকা শিকল দিয়ে বাঁধা হয়েছে? রেল কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা, দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনগুলি ঝড়ের দাপটে কোনো কারণে নিজের অবস্থান থেকে সরে গেলে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই আগাম সতর্কতা হিসাবে ট্রেনের চাকাগুলি বেঁধে রাখা হয়েছে। তবে শুধু ঝড়ের ক্ষেত্রেই নয়, ট্রেন কোনো কারণে
দীর্ঘক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখা হলে তার চাকা এ ভাবেই বেঁধে রাখা হয় বলেই জানিয়েছেন রেলের কর্মকর্তারা। লকডাউনের মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে ‘শ্রমিক স্পেশাল’ চালানোর উদ্যোগ নিয়েছিল রেল। চালানো হচ্ছিল এসই স্পেশাল এক্সপ্রেসও। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কবার্তা পেয়ে ওই ট্রেনগুলি আপাতত বাতিল করা হয়েছে। এ দিন হাওড়া থেকে নয়া-দিল্লিগামী আপ এসই স্পেশাল এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লী থেকে হাওড়া ডাউন এসই স্পেশাল এক্সপ্রেসের যাত্রাও। মঙ্গলবারও দু’টি ট্রেন বাতিল করা হয়। সূত্র: আনন্দবাজার