২৩ করোনা আক্রা’ন্ত গেছেন ঈদের কেনাকাটা করতে, এলাকাজুড়ে আত’ঙ্ক
প্রকাশ: ২০২০-০৫-১৯ ১১:৩৬:৪৫ || আপডেট: ২০২০-০৫-১৯ ১১:৩৬:৪৫

সাতক্ষীরা: যতই দিন যাচ্ছে দেশের করোনা পরিস্থিতি ততই খারাপ হচ্ছে। ইতোমধ্যে সারাদেশে ২২ হাজার ২৬৮ জন করোনা রোগী শনা’ক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩২৮ জন। আর এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৩৭৩ জন।ইতোমধ্যে দেশের সব জেলায় ছ’ড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘা’তী এই ভাইরাসের সং’ক্রমণ।
এদিকে, এতদিন সাতক্ষীরা জেলায় করোনাভাইরাস সং’ক্রমণ ভালোভাবে প্রতিরো’ধ করেছিল স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু রবিবার হঠাৎ পাল্টে যায় সেখানকার করোনা পরিস্থিতির চি’ত্র। একসঙ্গে ২৪ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। করোনা আক্রা’ন্তরা করেছেন ঈদের কেনাকাটাও।
১ মে নারায়ণগঞ্জ থেকে একটি ট্রাকে সাতক্ষীরার দেবহাটায় ফে’রেন ২৪ জন ইটভাটা শ্রমিক। তাদের দেবহাটা খানবাহাদুর আহসানউল্লাহ কলেজের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। সেখানে ৫ মে এক যুবকের শরীরে করোনা শনা’ক্ত হয়। এরপর বাকিদের নমু’না সংগ্রহ করা হয়। বাকি ২৩ শ্রমিকের উপসর্গ না থাকায় ১৪ মে কোয়ারেন্টাইন থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু দুইদিন পর ২৩ শ্রমিকের সবার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে।জানা গেছে, আক্রা’ন্ত ২৩ শ্রমিকের মধ্যে এক পরিবারের দুই শিশু ও তার মা-বাবার করোনা পজিটিভ এসেছে। তারা
দেবহাটার খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ কলেজে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। তাদের বাড়ি সাতক্ষীরা সদরের ধূলিহর এলাকায়। কোয়ারেন্টাইনমু’ক্ত হয়ে তারা দেবহাটা থকে সাতক্ষীরার বাড়িতে ফেরেন। আক্রা’ন্তদের মধ্যে দেবহাটা সদর ইউনিয়নের একজন গ্রাম পুলিশও রয়েছেন। বাকি আক্রা’ন্তদের বাড়ি দেবহাটা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।
দেবহাটা উপজেলার বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান শাওন গণমাধ্যমকে বলেন, কোয়ারেন্টাইন থেকে ১৪ মে মুক্তির পর এসব শ্রমিক পরিবারের জন্য ঈদের কেনাকাটা করাসহ বাজারে ঘুরেছেন। কেউ ভ্যান চালিয়েছেন। আক্রা’ন্তরা এলাকায় চ’ষে বেড়িয়েছেন। মা’রাত্মক ঝুঁ’কির মধ্যে পড়ছে দেবহাটা উপজেলা। হঠাৎ এ খবর পাওয়ার পর আত’ঙ্ক ছ’ড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।
দেবহাটা থানা পুলিশের ওসি বিপ্লব কুমার সাহা গণমাধ্যমকে বলেন, ট্রাকে এসব শ্রমিক ১ মে দেবহাটায় ফে’রার পর প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়। তবে আমাদের না জানিয়ে তাদের কোয়ারেন্টাইন থেকে ছে’ড়ে দেওয়া হয়েছে। আক্রা’ন্ত সবার বাড়িই লকডাউন করা হবে।
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফরীন বলেন, প্রশাসনের ন’জর এ’ড়িয়ে করোনা আক্রা’ন্তদের এলাকায় ঘু’রে বেড়ানো অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে বিষয়টি আগে কেউ প্রশাসন বা পুলিশকে জানায়নি। করোনা আক্রা’ন্ত সবার বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা পেলে করোনা ছ’ড়িয়ে পড়া ইউনিয়নগুলোও লকডাউন করা হবে।
সাতক্ষীরার সিভিল সা’র্জন ডা. মো. হুসাইন সাফায়াত বলেন, রবিবার বিকালে হাতে পাওয়া রিপোর্টে ২৪ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। এর মধ্যে দেবহাটা উপজেলার ২৩ জন। আর আশাশুনি উপজেলার একজন। দেবহাটা উপজেলার সবাই ইটভাটা শ্রমিক। তারা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। সেখানে ২৪ জন ইটভাটা শ্রমিক ছিলেন। প্রথমে একজনের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ ধ’রা পড়ে। এরপর বাকিদের নমু’না সংগ্রহ করে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, কোয়ারেন্টাইনে একত্রে থেকে একজন থেকে বাকি ২৩ জনের শরীরেও ছ’ড়িয়ে পড়েছে করোনা। হাঠাৎ সাতক্ষীরার করোনা পরিস্থিতির চি’ত্র এ’লোমে’লো হয়ে গেছে। তাদের সং’স্পর্শে কারা এসেছিলেন তাদের খুঁ’জে বের করার চেষ্টা করছি। প্রয়োজনে দেবহাটা উপজেলা লকডাউন করা হবে।
এদিকে, রবিবার বিকাল পর্যন্ত সাতক্ষীরায় করোনা শনা’ক্ত ছিল তিনজন। যশোরের শনা’ক্ত হওয়া এক স্বাস্থ্যকর্মী ছিলেন সাতক্ষীরায়। এছাড়া ঢাকা থেকে পা’লিয়ে এসেছেন একজন আক্রা’ন্ত নারী। সব মিলিয়ে এখন সাতক্ষীরায় করোনা আক্রা’ন্তের সংখ্যা ২৯ জন। সুস্থ হওয়া ব্যক্তি যশোরের ওই স্বাস্থ্যকর্মী।বিডি প্রতিদিনপ্রচণ্ড গরম পড়ায় আমাগো খাবার পইচ্যা যেত। সেই খাবার খাইয়্যা চলত আমাদের। এখন আমাগো একটা ফ্রি দিল। আমাগো এখন আর পঁচা ভাত খাইতে হবে না। খাওয়ার পর যে ভাত বাঁচবো তা ফ্রিজে রাইখা দেব।’
এমনভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কাশিয়ানী উপজেলার রাজপাট ইউনিয়নের হাইশুর বৃদ্ধাশ্রমে থাকা সত্তোরোর্ধ বৃদ্ধা ঝর্ণা বসু। তার মতোই এ বৃদ্ধাশ্রমে আছেন ১৮ জন বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা।
বৃদ্ধাশ্রমের এসব বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাদের জন্য গোপালগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের পক্ষে একটি ফ্রিজ উপহার দিলেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নীতিশ রায়।
সোমবার সকালে বৃদ্ধাশ্রমের সেবক আশুতোষ বিশ্বাসের কাছে এ ফ্রিজ হস্তান্তর করেন তিনি। এ সময় গোপালগঞ্জ রিপোর্টাস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এস.এম নজরুল ইসলাম, গোপালগঞ্জ টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহম্মেদ রাজু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মঙ্গল কৃর্ত্তলীয়া নুরুজ্জামান নুরু ও ফুলমতি বেগম বলেন, অনেক সময় আমাদের খাবার বেচে যেতে। কিন্তু একটি ফ্রিজের অভাবে সে খাবার হয়তো পচে গিয়ে নষ্ট হতো না হয় ফেলে দিতে হতো। এখন আর সেটি করতে হবে না। বেচে যাওয়া খাবার ফ্রিজের রেখে পরদিন গরম করে খেতে পারবো। ফ্রিজ উপহার পেয়ে খুশি তারা।
হাইশুর বৃদ্ধাশ্রমের সেবক আশুতোষ বিশ্বাস জানান, প্রায় ২২ বছর আগে মানবিক কারণে এই বৃদ্ধাশ্রমটি গড়ে তোলেন তিনি। এরপর থেকে নিজস্ব তহবিল ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সহযোগিতা নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে একটি ফ্রিজের অভাবে প্রায় প্রতিদিনই রান্না করা খাবার সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হতো। অসহায় বাবা-মায়েদের কথা চিন্তা করে ফ্রিজ উপহার দেয়ায় ধন্যবাদ জানান তিনি।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নীতিশ রায় বলেন, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার হাইশুরে অবস্থিত এই বৃদ্ধাশ্রমে ১৮ জন অসহায় বাবা-মা থাকেন। যখন জানতে পারি একটি ফ্রিজের অভাবে তাদের প্রতিদিনের খাবার নষ্ট হচ্ছে, তখনই গোপালগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্যকে বিষয়টি জানালে তিনি একটি ফ্রিজ উপহার দেয়ার নির্দেশ দেন। আগামীতেও এই বৃদ্ধাশ্রমের পাশে থাকার কথা জানান তিনি।